যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট কি?
competency based curriculum
What is competency? যোগ্যতা কি?
যোগ্যতা বলতে সুনির্দিষ্ট আচরণকে বুঝানো হয়। পঠনপাঠনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গী পরিপুর্ণভাবে আয়ত্ব করার পর তার বাস্তব জীবনে প্রয়োজনের সময় কাজে লাগাতে পারলে সেই জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গীর সমন্বয়কে যোগ্যতা বলা হয়। আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় যে কোন যোগ্যতা অর্জনের শুরু হয় ১ম শ্রেনি থেকেই। তবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু থেকে শেষ অবধি অর্জিত যোগ্যতাই হল প্রান্তিক যোগ্যতা।
যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম কাকে বলে?
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের সংজ্ঞা (Definition of Competency Based Curriculum)
শিক্ষার্থীগণ একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যেমন- প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে পাঁচ বছরে যে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের যে ধরনের আচরণিক পরিবর্তন ঘটবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয় তাকে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম বলে।
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী কী শিখবে তা ঠিক করার আগে কেন শিখবে সে প্রশ্ন প্রাধান্য পায়। এ “কেন‘-র উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রতিটি শিখন উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা হয়। ফলে উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়। শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কি যোগ্যতা অর্জন করবে তা সুনির্দিষ্ট না থাকায় শিক্ষক ঠিকভাবে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি পরিমাপ করতে সমর্থ হন না। এ ছাড়া বর্তমানে শিক্ষাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বলিষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। শিক্ষার্থীকে কোন বিষয়ে পুরোপুরি শিখনে সহায়তা করা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শহর ও পল্লী এলাকার বিদ্যালয়ে একই ধরনের ভৌত সুবিধাদি, একই যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক এবং একই পাঠ্যপুস্তক ব্যবহৃত হচ্ছে। এতদসত্বেও শহর এবং পল্লী এলাকার শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতির পার্থক্যের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এহেন অবস্থা কোন দেশ বা জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাই যোগ্যতাভিত্তিক মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ইনক্লুশন(Inclusion) সব ধরনের শিক্ষার্থীদের কাম্য যোগ্যতা অর্জনে সাহায়ক হবে। যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রমের আরেকটি বৈশিষ্ট হল , অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা বাস্তব জীবনে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল আচরণের অনুশীলন করানো। আর এ কারনেই যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রমকে উদ্দ্যেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রমও বলা যেতে পারে।
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের প্রকৃতি
- শিক্ষার্থী কোন শ্রেণিতে কোন বিষয়ে কি কি যোগ্যতা (জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবে তা সুনির্দিষ্টকরণ।
- শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ্য ও মানসিক পরিণমন এবং তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করে যোগ্যতা নির্বাচনের ক্ষেত্র সুনিদিষ্টকরণ।
- শিক্ষার্থীর অর্জিত যোগ্যতা তাৎক্ষণিক প্রয়োগ করানোর মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনে তাকে আত্মপ্রত্যয়ীকরণ।
- শহর ও পল্লী অঞ্চলের সকল বিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে কতটুকু শেখাতে হবে এবং কি যোগ্যতা অর্জন করাতে হবে সেগুলোর সঙ্গে শিক্ষকগণের পরিচিতিকরণ।
- জীবনের প্রস্তুতির জন্য শিক্ষা , মুখস্থ করে সনদপত্র অর্জনের জন্য শিক্ষা নয় তা সামনে রেখেই শিক্ষার সমস্ত কর্মকান্ডের আয়োজন।
- পুরোপুরি শিখন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অপ্রয়োজনীয় তত্ত্ব ও তথ্য পরিহারপূর্বক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন।
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের পরিসর
সর্বজনীন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যেই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের পরিসর নিহিত। তবুও অবহিত হওয়ার সুবিধার্থে সেগুলো নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো: বিদ্যালয়ে আগমন উপযোগী সকল স্বাভাবিক শিশুর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি।বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ধরে রেখে পুরোপুরি শিখন নিশ্চিতকরণ।অসুবিধাগ্রস্ত পরিবার থেকে আগত শিশুর পূর্বপ্রস্তুতিমূলক শিক্ষাদান করে বিদ্যালয়ে তাদের উপস্থিতি স্থিতিশীলকরণ।বিশেষ করে মেয়ে শিশুর বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষালাভের বাধাবিপত্তি (যেমন: লিঙ্গ তারতম্য) দূরীকরণ এবং খাদ্যের বদলে শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিতকরণ।
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Competency Based Curriculum)
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা রয়েছে। এগুলো নিচে সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো: যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে এক নির্দিষ্ট মেয়াদকালে শিক্ষার্থীগণ কি কি যোগ্যতা কতটুকু অর্জন করবে তা সুনির্দিষ্ট করা হয়। এতে যোগ্যতার পরিমাণ ও পরিসর সুচিহ্নিত থাকে এবং এতে শিক্ষক প্রতিটি যোগ্যতার পরিসর অনুসারে পাঠদান করতে পারেন।যোগ্যতাসমুহ নির্ধারণ বা নির্বাচনের সময় শিক্ষার্থীর বয়স ও গ্রহণ ক্ষমতার ওপর দৃষ্টি রাখা যায়।নির্ধারিত যোগ্যতাসমুহের কাঠিণ্য অনুসারে শ্রেণীভিত্তিক বিন্যাস করা যায়। সহজ যোগ্যতা থেকে ধীরে ধীরে কঠিন যোগ্যতা শিখনক্রমে স্থান পায়।যোগ্যতাসমূহ নির্বাচনের সময় জ্ঞান , দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষতা এ তিন প্রকার যোগ্যতার যথাযথ সংমিশ্রণ ঘটানো সম্ভব। এতে শিক্ষার্থীর শিখন অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে একমুখি নির্বাচন এড়ানো যায়। তাছাড়া শিক্ষার্থীকে ধীরে ধীরে জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগের অভ্যাস গড়ে তোলা যায় এবং তার শিখন সর্ম্পূণতা লাভ করে।বিভিন্ন শিখন পদ্ধতি নির্ধারণ করা যায়। যোগ্যতার প্রকৃতির ওপর শিখন-শেখানো কার্যাবলি নির্ভর করে। ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতার সংমিশ্রণ ঘটানো হয় বলে ভিন্ন ভিন্ন শিখন- শেখানো কার্যাবলি অবলম্বন করা যায়। তাতে শিখন কার্যাবলিতে বৈচিত্র ঘটে এবং শিখন শিক্ষার্থীদের নিকট আকর্ষণীয় ও আনন্দ দায়ক হয়।শিক্ষার্থীর শিখন-অগ্রগতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে কেন্দ্র করে এর প্রকৃতি অনুসারে উপযুক্ত অভীক্ষা (প্রশ্নমালা) ও কৌশল প্রয়োগ করা যায়। কাম্য যোগ্যতাঅর্জনে শিক্ষার্থীর প্রকৃত অগ্রগতি যাচাই করা যায় এবং দুর্বল শিক্ষার্থীর জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হয়
সংগ্রহ ও সম্পাদনায়
মোঃ ময়দুল ইসলাম
শিক্ষক ও শিক্ষক প্রশিক্ষক